অন্যান্য

খনিজ পদার্থ এবং পানি

জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য ভিটামিনের মতাে খনিজ পদার্থ বা খনিজ লবণও খুবই প্রয়ােজনীয়। খনিজ পদার্থ প্রধানত কোষ গঠনে সাহায্য করে। প্রাণীরা প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাদ্য থেকে খনিজ পদার্থ পায়। আমরা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাছ এবং পানীয় জলের মাধ্যমে আমাদের খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করি। নিচে শরীরের প্রয়ােজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানগুলাের উৎস, পুষ্টিগত গুরুত্ব এবং অভাবজনিত সমস্যাগুলাের কথা উল্লেখ করা হলাে:

লৌহ (Fe)

লৌহ রক্তের একটি প্রধান উপাদান। প্রতি ১০০ ml রক্তে লৌহের পরিমাণ প্রায় ৫০ mg। যকৃৎ, প্লীহা, অস্থিমজ্জা এবং লােহিত রক্তকণিকায় এটি সঞ্চিত থাকে। লৌহের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে ফুলকপির পাতা, নটেশাক, নিম পাতা, ডুমুর, কাঁচা কলা, ভুট্টা, গম, বাদাম, বজরা ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎস হচ্ছে মাছ, মাংস, ডিম, যকৃৎ ইত্যাদি। লৌহের প্রধান কাজ হিমােগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করা। হিমােগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা রােগ হয়। রক্তশূন্যতা রােগের লক্ষণ চোখ ফ্যাকাসে হওয়া, হাত-পা ফোলা, দুর্বলতা, মাথা ঘােরা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।

ক্যালসিয়াম (ca)

এটি প্রাণীদের হাড় এবং দাঁতের একটি প্রধান উপাদান। মানুষের শরীরের মােট ওজনের শতকরা দুই ভাগ হচ্ছে ক্যালসিয়াম। খনিজ পদার্থের মধ্যে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অস্থি এবং দাঁতে ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে এর ৯০% শরীরে সঞ্চিত থাকে। রক্তে এবং লসিকাতে এর উপস্থিতি লক্ষণীয়।

ক্যালসিয়ামের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে: ডাল, তিল, সয়াবিন, ফুলকপি, গাজর, পালংশাক, কচুশাক, লালশাক, কলমিশাক, বাঁধাকপি এবং ফল। প্রাণিজ উৎস হচ্ছে: দুধ, ডিম, ছােট মাছ, শুটকি মাছ ইত্যাদি। হাড় এবং দাঁতের গঠন শক্ত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অতিপ্রয়ােজনীয় খনিজ পদার্থ।

এ ছাড়া ক্যালসিয়াম রক্ত সঞ্চালনে, হৃৎপিণ্ডের পেশির স্বাভাবিক সংকোচনে এবং স্নায়ু ও পেশির সঞ্চালনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে রিকেটস এবং বয়স্ক নারীদের অস্টিওম্যালেসিয়া রােগ হয়। এর অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয় এবং তাদের রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে।

ফসফরাস (P)

দেহে পরিমাণের দিক থেকে খনিজ লবণগুলাের মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরই ফসফরাসের স্থান। ফসফরাসও ক্যালসিয়ামের মতাে হাড়ের একটি প্রধান উপাদান। ফসফরাস হাড়, যকৃৎ এবং রক্তরসে সঞ্চিত থাকে। নিউক্লিক এসিড, নিউক্লিয় প্রােটিন তৈরি এবং শর্করা বিপাকের দ্বারা শক্তি উৎপাদনে ফসফরাস প্রধান ভূমিকা রাখে।

ফসফরাসের উদ্ভিজ্জ উৎস হচ্ছে: দানা শস্য, শিম, বরবটি, মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎস হচ্ছে: ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের মতাে হাড় এবং দাঁত গঠন করা ফসফরাসের প্রধান কাজ। ফসফরাসের অভাবে রিকেটস, অস্থিরতা, দন্তক্ষয়— এইসব রােগ দেখা দেয়। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রােটিন ও ক্যালসিয়াম থাকলে ফসফরাসের অভাব হয় না।

পানি (Water)

পানি খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ পানি ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০%-৭৫% হচ্ছে পানি। আমাদের রক্ত, মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানির প্রয়ােজন।

দেহকোষ গঠন এবং কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া পানি ছাড়া কোনােভাবেই সম্পন্ন করা সম্ভব পানির মাধ্যমে শরীর গঠনের নানা প্রয়ােজনীয় উপাদান শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবাহিত হয়। এটি জীবদেহে দ্রাবকের কাজ করে, খাদ্য উপাদানের পরিপাক ও পরিশােষণে সাহায্য করে।

বিপাকের ফলে দেহে উৎপন্ন ইউরিয়া, অ্যামােনিয়া ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত পদার্থগুলােকে পানি মূত্র ও ঘাম হিসেবে শরীর থেকে বের করে দেয়। এ ছাড়া পানি শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ এবং বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

শরীরে পানির উৎস :

  • খাবার পানি, পানীয় যেমন: চা, দুধ, কফি, শরবত।
  • বিভিন্ন খাদ্য যেমন: শাক-সবজি ও ফল।

শরীর থেকে মােট নির্গত পানির পরিমাণ গৃহীত পানির পরিমাণের সমান হলে শরীরে পানির সমতা বজায় থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত, কারণ প্রায় ঐ পরিমাণ পানি প্রত্যেকদিনই আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়। গরম আবহাওয়ায়, কঠোর পরিশ্রমে দেহে পানির অভাব দেখা দেয়।

এ সময় পানি পানের পরিমাণ বাড়ানাে উচিত। ডায়াবেটিস রােগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীরে পানির অভাব হতে পারে। শরীরে পানির অভাব হলে তীব্র পিপাসা হয়, রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে, ত্বক কুঁচকে যায়। পানির অভাবে স্নায়ু ও পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। দেহে অম্ল ও ক্ষারের সমতা নষ্ট করে এসিডােসিস রােগের সৃষ্টি হয়।

শরীরে পানি ১০% কমে গেলে সংজ্ঞা লােপ পায়, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। অত্যধিক বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণেও শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যেতে পারে। শরীরে পানির অভাব নিরসনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব রােগীকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হয়। শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, খাবার স্যালাইন তা পূরণ করে শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে। (বাসায় খাবার স্যালাইন না থাকলে এক চিমটি লবণ, এক মুঠো গুড় বা চিনি এবং এক গ্লাস পানি মিশিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়।)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button